কন্যাকে জীবন্ত কবর

নবাব কেন কন্যাকে জীবন্ত কবর দিয়েছিলেন?

আমার মুর্শিদাবাদ সফরে অন্যতম একটা স্থান জুড়ে ছিলো পণ্ডিত মণ্ডল এবং তার টাঙা গাড়ি। আগের একাধিক পোস্টে আমি সে সম্পর্কে বলেছি। পণ্ডিত মণ্ডল তার টাঙা গাড়িতে করে আমাদের নিয়ে ঘুরেছে মুর্শিদাবাদের অলিতে গলিতে। আমাদেরকে জানিয়েছে হারিয়ে যাওয়া বহু ইতিহাস। তার মধ্যে অন্যতম এবং ভয়ঙ্কর একটি ইতিহাসের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি আমরা।
টাঙা গাড়িতে দুলতে দুলতে এগিয়ে চলেছি। এমন সময় পণ্ডিত মণ্ডল হাত তুলে একটা ভগ্ন দেওয়াল দেখালো। ততক্ষণে ঘোড়া দাঁড়িয়ে পড়েছে, থেমে গেছে টাঙা। পণ্ডিত মণ্ডল বলল, এই যে ধ্বংসাবশেষটি দেখছেন, এখানে একটি মসজিদ ছিলো। বর্তমানে শুধু এই দেওয়ালটিই অবশিষ্ট আছে। দেখে আশ্চর্যই হলাম। এ অঞ্চলে অন্য যেসব মসজিদ আছে ধ্বংসপ্রাপ্ত কিংবা প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত, সেগুলোরও এতো বেহাল দশা হয়নি যে শুধু একটা ভগ্ন দেওয়াল দাঁড়িয়ে থাকবে। কিন্তু এর এ অবস্থা কেন? প্রশ্ন করতে যাওয়ার আগেই পণ্ডিত মণ্ডলের দেওয়া আরো কিছু তথ্যে পিলে চমকে গেলো আমার এবং সেই সাথে আমার সফরসঙ্গীদেরও।
পণ্ডিত মণ্ডল জানালো, মসজিদে ওঠার যে সিঁড়ি, তার নিচেই রয়েছে নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ এর কন্যা আজিমুন্নেসার কবর। এটাতে কিছুটা আশ্চর্য হয়েছি বৈকি। তবে ধরে নিলাম পিতা মুর্শিদকুলি খাঁ এর মত তাকেও মৃত্যুর পর কবরস্থ করা হয় সিঁড়ির নিচে। কারণ, আগেই জেনেছি কাটরা মসজিদের সিঁড়ির নিচে রয়েছে নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ এর কবর। তারই ধারাবাহিকতায় তার কন্যাও অন্য একটি মসজিদের সিঁড়ির নিচে ঠাই পেয়েছেন হয়তবা বিশেষ কোন কারণে। কিন্তু আমার চিন্তায় ছেদ ফেললো পণ্ডিত মণ্ডলের কথা। নবাব কন্যাকে নাকি জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছিলো!
আমরা ততক্ষণে টাঙা গাড়ি থেকে নেমে পড়েছি। দাঁড়িয়ে আছি পণ্ডিত মণ্ডল অবাক করার মত আর কিছু বলে কিনা। আমাদেরকে নিরাশ হতে হয়নি। পণ্ডিত মণ্ডলই নবাব কন্যার জীবন্ত কবরের রহস্য জানিয়ে দিলো। নবাব কন্যা আজিমুন্নেসা একবার এক জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। রাজ হেকিম তার জন্য ঔষধ তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই ঔষধ নাকি তৈরি করা হয়েছিলো মানব শিশুর কলিজা দিয়ে। আজিমুন্নেসা রোগ মুক্তির পরেও মানব শিশুর কলিজার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন এবং লুকিয়ে লুকিয়ে তিনি নাকি মানব শিশুর কলিজা খেতেন। এ খবর একদিন তার পিতা নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ জানতে পারেন। তারপর তিনি নিজেই তাকে জীবন্ত কবর দেন এইখানে।
পণ্ডিত মণ্ডলের থেকে ঘটনা জেনে নিয়ে এগিয়ে গেলাম আমরা। গা ছমছমে একটা ব্যাপার কিন্তু ছিলই। গেইটের কাছে আজিমুন্নেসার সমাধিস্থলের বর্ননা সংবলিত সাইনবোর্ড দেওয়া ছিলো। যদিও সেখানে আমি জীবন্ত কবর কিংবা মানব শিশুর কলিজা খাওয়া সংক্রান্ত কোন কিছুই দেখতে পাইনি। ইতিহাস বলে ১৭৩০ সালের দিকে এইখানে কবরস্থ করা হয় আজিমুন্নেসাকে। এরপর ১৭৩৪ সালে এখানে নির্মিত হয় একটি মসজিদ। আগেই বলেছি সেই মসজিদের শুধু একটি দেওয়াল ছাড়া আর কিছুই এখন অবশিষ্ট নেই।
স্থানীয় মানুষেরা বিশ্বাস করেন আজিমুন্নেসাকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছিলো। তাদের দাবী, আজিমুন্নেসা জীবনে যেই পাপ করেছিলো মানব শিশুর কলিজা খেয়ে, তার কিছুটা যাতে মোচন হয় সেকারণেই তাকে সমাহিত করা হয় মসজিদের সিঁড়ির নিচে। যেন মুসল্লীদের পায়ের ধুলায় কমে যাবে আজিমুন্নেসার পাপ!
আজিমুন্নেসার সমাধিতে করা আমার ভিডিওটি দেখে নিতে পারেনঃ নবাব কন্যা আজিমুন্নেসার জীবন্ত কবরের রহস্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কন্যাকে জীবন্ত কবর

Related Post

Explore Videos