মিরিঞ্জা ভ্যালী—যেখানে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৫০০ ফুট উচ্চতায় দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় মেঘ ছোঁয়ার মতো এক চমৎকার অনুভূতি। পাহাড়ি ট্রেকিং, ঝর্ণার সৌন্দর্য আর আদিবাসী গ্রাম একসাথে উপহার দিতে পারে জীবনের শ্রেষ্ঠ কিছু মুহূর্ত। সেই অভিজ্ঞতাই নিতে এবারের গন্তব্য ছিলো মিরিঞ্জা ডেঞ্জার হিল, যেখানে কাটিয়েছি এক রাত।
🚆 যাত্রা শুরু: ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম
১১ জুন রাতে, ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে মহানগর এক্সপ্রেসে রওনা হলাম চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। ট্রেন ছাড়ে রাত ৯:২০-এ।
টিকিট ছিলো শোভন চেয়ারে, যার মূল্য ৪০৫ টাকা। ভিড় একটু বেশি থাকলেও যাত্রা মন্দ হয়নি। চাইলে কক্সবাজার এক্সপ্রেস বা তুর্না এক্সপ্রেস দিয়েও চট্টগ্রাম যেতে পারেন।
🚍 আপনি চাইলে সরাসরি বাসেও যেতে পারেন মিরিঞ্জা বাজারে। হানিফ ও শ্যামলী পরিবহন সরাসরি মিরিঞ্জা বাজারে নামিয়ে দেয়। ভাড়া জনপ্রতি প্রায় ১১০০ টাকা।
🛻 চট্টগ্রাম থেকে মিরিঞ্জা বাজার
ভোর ৫টার দিকে চট্টগ্রাম পৌঁছালাম। সেখান থেকে সিএনজি করে গেলাম নতুন ব্রিজ।
সেখান থেকে চকোরিয়াগামী লোকাল বাসে চড়লাম। জনপ্রতি ভাড়া নিয়েছে ৩০০ টাকা, যদিও পরে জানতে পারি এই ভাড়া সাধারণত ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে হওয়া উচিত। এই জায়গায় সতর্ক থাকবেন।
চকোরিয়া পৌঁছে সাদামাটা এক হোটেল থেকে সকালের নাস্তা সেরে নিলাম। এরপর চাঁদের গাড়িতে চড়ে রওনা হলাম মিরিঞ্জা বাজার। জনপ্রতি ভাড়া ৮০ টাকা। চাইলে রিজার্ভ করলে ১২০০–১৩০০ টাকা খরচ হবে।
পাহাড়ি রাস্তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে পৌঁছে গেলাম ইয়াংছা বাজার।
সেখানে রয়েছে আর্মি চেকপোস্ট। এনআইডির ফটোকপি জমা দিয়ে সঙ্গে নিজের ও অভিভাবকের ফোন নাম্বার লিখে দিতে হয়।
🥾 ট্রেকিং শুরু: গন্তব্য ডেঞ্জার হিল রিসোর্ট
চেকপোস্ট পার হয়ে আবার উঠলাম চাঁদের গাড়িতে। এবার নামলাম মিরিঞ্জা বাজারে, এখান থেকেই শুরু হলো ট্রেকিং।
বাবলু ভাই, যিনি রিসোর্টের মালিক, বলেছিলেন ১৫ মিনিটেই পৌঁছে যাবো কটেজে—but তখনও জানতাম না, আগের রাতের বৃষ্টির কারণে পথ হয়ে উঠেছে সত্যিকার অর্থেই ডেঞ্জারাস!
পাহাড়ি পথ slippery হয়ে পড়ায় ট্রেকিং একটু কঠিন ছিলো, তবে স্থানীয় মানুষ, প্রকৃতি আর রোমাঞ্চ মিলে যেন সব কষ্টই ভুলিয়ে দিলো। সামনে এগোতেই দেখা মিলল আমাদের কাঙ্ক্ষিত রিসোর্টের।
আরো পড়ুনঃ মাত্র ১৮৯০ টাকায় জাফলং, মায়াবী ঝর্ণা ও ডাউকি ভ্রমণ
🏡 রিসোর্টে পৌঁছানো ও ঝর্ণা দর্শন
রিসোর্টে পৌঁছে আমাদের স্বাগত জানালেন ম্যানেজার সুমন ভাই। কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে আমরা চলে গেলাম আমাদের নির্ধারিত কটেজে।
কটেজের ব্যালকনি থেকেই দেখা গেলো নিচে এক ঝর্ণা—নাম নোনাঝিরি ঝর্ণা। তার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জলের শব্দে মন জুড়িয়ে গেলো। ব্যালকনি থেকে দূরে দেখা যায় বিশাল ডিম পাহাড়। চমৎকার এক পরিবেশ।
🍛 দুপুরের খাবার ও টিপরা পাড়ায় যাত্রা
কিছু বিশ্রামের পর দুপুরে খেতে পেলাম সাদা ভাত, আলু ভর্তা, ডিম, চিকেন ও ডাল। খাবার বেশ মানসম্মত।
এরপর রওনা হলাম আদিবাসী টিপরা পাড়ার উদ্দেশ্যে। প্রায় দেড় ঘণ্টা ট্রেক করে পৌঁছালাম সেখানে। ছোট ছোট বাচ্চারা খেলছিল, বড়রা জুম চাষে ব্যস্ত। ভিন্ন সংস্কৃতির এই গ্রাম এক অন্যরকম ভালোলাগা তৈরি করে দিলো।
🌊 নোনাঝিরি ঝর্ণা
টিপরা পাড়া থেকে ফিরে এবার রওনা দিলাম নোনাঝিরি ঝর্ণার দিকে। একজন আদিবাসী দোকানদারের কাছ থেকে জানতে পারলাম পথনির্দেশনা। প্রায় ৩০ মিনিট ট্রেকিং করে পৌঁছালাম ঝর্ণায়। ক্লান্ত শরীর তাজা হয়ে উঠলো ঝর্ণার জলে।
ফিরে আসার পথে পাহাড়ি উপত্যকা আর ট্রেইলের প্রতিটি বাঁকে প্রকৃতির সৌন্দর্য ছিলো অবর্ণনীয়। আপহিল-ডাউনহিল মিলে পথ বেশ কঠিন ছিলো, তবে রোমাঞ্চে পূর্ণ।
🌙 রাতের ডেঞ্জার হিল
সন্ধ্যায় রিসোর্ট থেকে দেওয়া হলো হালকা নাস্তা। রাতের খাবারে ছিলো চিকেন বারবিকিউ আর পরোটা—একদম পাহাড়ি পরিবেশে উপযোগী মেন্যু।
এরপর ঘুম—পরের দিনের মেঘ ছোঁয়ার সকাল যে আরও বিস্ময় নিয়ে অপেক্ষা করছে!
🌄 শুভ সকাল মিরিঞ্জা ভ্যালী!
ভোরে ঘুম ভেঙেই দেখলাম চারপাশ মেঘে ঢাকা! সেই অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না—শুধু বলা যায়, এটাই প্রকৃতির স্পর্শ।
কিছুক্ষণ মেঘে মোড়া প্রকৃতি ঘুরে আবার কটেজে ফিরলাম। সকালের নাস্তায় ছিলো খিচুড়ি আর ডিম। খাবার বেশ ভাল ছিলো এবং রিসোর্টের স্টাফদের আপ্যায়ন ছিলো প্রশংসনীয়।
📞 রিসোর্ট বুকিং এর তথ্য
আপনিও যদি এই রকম এক দুর্দান্ত ভ্রমণ অভিজ্ঞতা চান, তবে অবশ্যই আগে থেকে কটেজ বুকিং দিয়ে রাখুন।
📍 ডেঞ্জার হিল বুকিং কন্টাক্ট:
- বাবলু ভাই (রিসোর্ট মালিক): 01759‑139075
- সুমন ভাই (ম্যানেজার): 01317‑657844
🔸 “Explore With Manna” ইউটিউব চ্যানেলের নাম বললে পেতে পারেন বিশেষ ডিস্কাউন্ট।
👉 যদি বড় গ্রুপে যান, তাহলে চাইলে মেন্যু কাস্টমাইজ করে নিতে পারবেন আগেই বলে।
পাহাড়ে ট্রেকিং, ঝর্ণা, মেঘ ছোঁয়ার অনুভূতি আর আদিবাসী সংস্কৃতির স্বাদ—সব মিলিয়ে মিরিঞ্জা ডেঞ্জার হিল আমার জীবনের অন্যতম সুন্দর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা।